জমির খাজনা ও খাজনা পরিশোধের নিয়ম
জমি থাকলে জমির খাজনা দিতে হবে সেটাই নিয়ম। নিয়মিত খাজনা প্রদানের মধ্য দিয়ে জমির প্রতি মালিকের অধিকার শক্ত হয় এবং মালিকানা প্রমাণে খাজনা প্রদানের তথ্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু সব ধরনের জমিরই কি খাজনা দিতে হয়?
ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা কি ?
কোনো জমি ভোগ দখলের সুবিধা গ্রহণের জন্য সরকারকে প্রতি শতাংশ জমির জন্য প্রতি বছর যে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা প্রদান করতে হয় তাকেই ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা বলে।
ভূমি উন্নয়ন কর বা জমির খাজনা প্রদানের সুবিধা
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই অত্যন্ত প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বসবাস করে এবং আইনী বিষয় সম্বন্ধে প্রায় অজ্ঞ থাকার কারণে বিভিন্ন বিষয় অবহেলা করে থাকে তার মধ্যে খাজনা প্রদান একটি। কিন্তু তারা জানে না যে খাজনা প্রদান করলে কি কি সুবিধা তারা ভোগ করতে পারবে। খাজনা প্রদান করলে অনেক সুবিধা পাওয়া যায় সেগুলি হলো:
১। ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের ফলে যে দাখিলা পাওয়া যায় উক্ত দাখিলা মালিকানা প্রমাণের গুরুত্ব পূর্ণ দলিল হিসাবে গন্য হয়ে থাকে।
২। ভূমি উন্নয়ন কর নিয়মিত প্রদান করলে রেকর্ড হাল নাগাদথাকে।
৩। নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করলে দুষ্ট লোকেরা ভুয়া রেকর্ডের সুযোগ নিতে পারেনা। অনেক সময় একজন আরেকজনের জমি গোপনে নামজারী/রেকর্ড করিয়ে নেয়। জমির মালিক নিজের জমির খোজ খবর না রাখার কারণে ভুয়া নামজারী বা মিউটেশনের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারে না।
৪। ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা পরিশোধ থাকলে জমি নিলাম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
ভূমি বা জমি সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়ে জানতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করুন
কৃষি জমির ভূমি উন্নয়ন কর বা জমির খাজনার হার
(যোগসূত্র স্মারক নং ভূঃ মঃ/শা-৩/কর/১০০/৯২-১০৬(১০০০) তারিখ ১৬/২/১৪০২ বাংলা মোতাবেক ৩০/৫/১৯৯৫ ইং তারিখে পাশকৃত সংশোধনী অনুযায়ী)
কৃষি জমির ক্ষেত্রে
২৫ বিঘা পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) মওকুফ করে দিয়েছে।
২৫ বিঘার অধিক হতে ১০ একর পর্যন্ত জমির জন্য প্রতি শতাংশ জমির জন্য ৫০ পয়সা করে।
১০ একরের উধ্বে হলে প্রতি শতাংশ জমির জন্য ১ টাকা হারে খাজনা দিতে হবে।
চা বাগান/রাবার বাগান/ফলের/ফুলের বাগানের ক্ষেত্রে
চা বাগানের রাবার বাগান, আমবাগান অথবা ১ একরের উর্ধ্বে কোনো জমিতে ফলের বাগান কিংবা ফুলের বাগান থাকলে জমির ক্ষেত্রে প্রতি শতাংশ জমির জন্য ১ টাকা ১০ পয়সা হারে খাজনা দিতে হবে।
পল্লী এলাকার আবাসিক জমির ক্ষেত্রে
(১৯৯০ সালের ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েলের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী)পল্লী এলাকার বসবাসকারী কৃষি পরিবারের চাষের জমি এবং বসত বাড়ী কৃষি জমি হিসাবে গন্য করে কৃষি হারে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করতে হবে (১৯৯০ সালের ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েলের ২৭ অনুচ্ছেদ মতে) তবে পল্লী এলাকার পাকা ভিটির বাড়ীর জন্য শতক প্রতি ৫/= হারে খাজনা দিতে হবে ।
শিল্প বা বাণিজ্যিক এলাকার খাজনা
শিল্প ও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত ভূমির জন্য খাজনার হার যেভাবে নির্ধারিত হবে তা হলো যে পরিমাণ জায়গা শিল্প/বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হয় তার খাজনা বাণিজ্যিক হারে আদায় করতে হবে ।
যে পরিমাণ জমি আবাসিক কাজে ব্যবহৃত হবে তার খাজনা আবাসিক হারে আদায় করতে হবে ।
অব্যবহৃত বা পতিত জমির কর কৃষি হারে (১/= প্রতি শতাংশ) আদায় করতে হবে ।
কোথায়, কীভাবে পাবেন জমি কেনা-বেচার উল্লেখযোগ্য ডকুমেন্ট?
ডেইরী ফার্ম/পোলট্রি পোলট্রি ফার্মের খাজনার হার
ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী পর্যায়ে কায়িক শ্রম বা নিজস্ব শারীরিক পরিশ্রমের উপর নির্ভরশীল হাঁস মুরগীর খামার/ডেইরী ফার্মের জন্য ব্যবহৃত জমির খাজনা মওকুফ করা হয়েছে । (০.৫০ হতে ১.৪৯ একর পর্যন্ত জমির মালিককে প্রান্তিক চাষী এবং ১.৫০ হতে ২.৪৯ একর পর্যন্ত জমির মালিককে ক্ষুদ্র চাষী বলা হয়)
কৃষি জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গবাদি পশু পালন ও হাঁস মুরগি এর খামার স্থাপন করা হলে সেই জমির পরিমাণ যাই হোক বাণিজ্যিক হারে খাজনা প্রদান করতে হবে ৷
শহর, উপশহর, পৌরসভা ও উপজেলা সদরে অবস্থিত বসতবাড়ী সংলগ্ন অকৃষি জমিতে ডিম, দুধ ও মাংস উত্পাদনের লক্ষ্যে স্থাপিত খামারে দুগ্ধবতী গাভীর সংখ্যা যদি অনধিক ১৫ টি হয় এবং হাঁস মুরগীর সংখ্যা যদি অনধিক ৫০০ টি হয় তবে উক্ত খামারের জমির জন্য খাজনা আবাসিক হারে প্রদান করতে হবে ৷
সরকারী/আধা সরকারী ও স্বায়ত্ব শাসিত সংখ্যা কর্তৃক গবেষণা মূলক কাজের অংশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত খামারের জমির খাজনা আবাসিক হারে আদায় করতে হবে ৷
উপরে উল্লেখিত যে সকল খামারের কর বা খাজনা মওকুফ করা হয়েছে এবং যে সকল খামারের কর বা খাজনা আবাসিক হারে আদায়ের কথা বলা হয়েছে সে সকল খামার যদি যান্ত্রিক পদ্ধতিতে দুধ ও মাংস প্রসেস করে বিপনন বা বিক্রির ব্যবস্থা করে তবে উল্লেখিত খামারের জমির খাজনা বাণিজ্যিক হারে আদায় করতে হবে ৷ উল্লেখ্য যে এসব খামারের গোচারন ভূমি বা হাঁস মুরগির খাদ্য উত্পাদনে ব্যবহৃত জমির খাজনা আবাসিক হারে আদায় করতে হবে ৷
তবে আর্থ সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এবং হাঁস মুরগির খামার গবাদি পশুর খামারকে প্রতিষ্ঠা করতে এবং প্রকৃত ব্যবহার নিশ্চিত করতে সকল খামারের ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা কৃষি হারে ধার্য্ হবে এবং তা ভূমি মন্ত্রণালয়ের ৪/৯/১৪০৩ বাংলা ২৮/১২/১৯৬ ইংরেজি তারিখের স্মারক নং ভূঃ মঃ / শাঃ-৩ / কর-৫৮/৯৬-২৫৩ (৬৪) স্মারক মতে ১৯৯৬ সাল হতে অদ্যবধি কার্যকর আছে ৷
এছাড়া আরও বলা হয়েছে যে খেলার মাঠ, স্টেডিয়াম সুইমিং পুল, শরীর চর্চা কেন্দ্র এবং সরকারীভাবে বিহিত সকল ক্রীড়া চত্বরের খাজনা আবাসিক হারে আদায় করতে হবে ৷ [ভূমি মন্ত্রণালয়ের ৪/৯/১৪০৩ বাংলা ২৮/১২/১৯৯৬ ইংরেজি তারিখের স্মারক নং ভূঃ মঃ/শাঃ-৩/কর-৫৮/৯৬-২৫৩ (৬৪)}মতে।]